বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরার সর্বস্তরের মানুষ এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃজন যে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন তার বিপুলতা ও গভীরতা এখনও আমাদের জানা হয়ে ওঠেনি। এই জানার প্রয়াস মুক্তিযুদ্ধের বহুমাত্রিকতা মেলে ধরে আমাদের সামনে এবং বর্তমান গ্রন্থ সেই অভাব পূরণে নিঃসন্দে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। রবীন সেনগুপ্ত (জন্ম : ১৯৩০) ত্রিপুরার কৃতী আলোকচিত্রী, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ফটোগ্রাফির জন্য সম্মাননা অর্জন করেছিলেন, একাধিক তথ্যচিত্রের তিনি নির্মাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকালেই আকুল হয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলেন কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য। যখন গণহত্যায় সংবাদ পৌঁছতে লাগলো ত্রিপুরায়, উদ্বাস্তু মানুষের ঢল উপচে পড়ছিল সীমান্তের ওপারে, সেই দিনগুলো থেকে নয় মাসব্যাপী নানামুখী সহায়ক কর্মকাণ্ডে তৎপর ছিল ত্রিপুরাবাসী এবং সেই সাথে ত্রিপুরার কৃতী আলোকচিত্রী রবীন সেনগুপ্ত, ইতিহাসের ঘটনাধারার সাক্ষী ও অংশী হয়ে উঠেছিলেন যিনি। অবশেষে ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর সাথী হয়ে রবীন সেনগুপ্ত প্রবেশ করলেন মুক্ত ঢাকায়, প্রত্যক্ষ করলেন পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ। ইতিহাসের প্রত্যক্ষচিত্র ধারণে রবীন সেনগুপ্তের ভূমিকার পরিচয় বহন করে ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গ্রন্থ ‘চিত্র-সাংবাদিকের ক্যামরায় মুক্তিযুদ্ধ’, একাত্তরটি চিত্র-সংবলিত বই। বর্তমান গ্রন্থে তিনি মেলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরাবাসী অংশীদারিত্বের সবিস্তার ভাষ্য, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সঙ্গে আহরিত তথ্যের মিশেলে ইতিহাসের অনন্য কথকতা।